শিরোনাম

ইরানে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গ্রেপ্তার

IRAN-JUSTICE-RIGHTS-MOHAMMADI-Khola_post

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ২০২৩ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদিকে আবারও গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার Mashhad শহরে একটি স্মরণসভায় অংশ নেওয়ার সময় তাঁকে আটক করা হয়। তার সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালিয়ে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, মোহাম্মদি Mashhad–এর একটি হলরুমে উপস্থিত ছিলেন এক মানবাধিকার আইনজীবীর স্মরণসভায়। অনুষ্ঠান চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা ভেতরে ঢুকে মোহাম্মদির ওপর শারীরিক হামলা করে তাকে টেনে–হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে।

এ সময় কয়েকজন সহযোগী ও অংশগ্রহণকারীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা।

ঘটনার পরও ইরানি প্রশাসন বা বিচারবিভাগীয় দপ্তর থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, এটিও তার বিরুদ্ধে আগের অভিযোগগুলোর ধারাবাহিকতাই—যেসব অভিযোগ সাধারণত “রাষ্ট্র নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কার্যকলাপ” নামেই পরিচিত।

নার্গিস মোহাম্মদি ইরানে দীর্ঘদিন ধরে নারীর অধিকার, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, এবং বন্দিদের মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছেন।

তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্যই তিনি ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। নোবেল কমিটি তাঁকে “ইরানে নারীর স্বাধীনতার প্রতীক” হিসেবে আখ্যায়িত করে।

তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই জেল–জুলুম ও হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রবিরোধী কাজ ও প্রচারণার অভিযোগে তাঁকে আটকের পর আটক, মামলার পর মামলা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁর মোট সাজা ১০ বছরেরও বেশি সময়ে পৌঁছেছে—যার বড় অংশ তিনি কারাগারেই কাটিয়েছেন।

মোহাম্মদিকে এর আগে স্বাস্থ্যগত গুরুতর সমস্যার কারণে কারামুক্ত করা হয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। তার ঘন ঘন গ্রেপ্তার–মুক্তির কারণে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার জীবনঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে,
“একজন নোবেলজয়ীকে এমনভাবে আটক করা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং তার স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য বিপজ্জনক।”

মোহাম্মদির দুই সন্তান ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কার গ্রহণের সময় জানান, তারা ১১ বছর ধরে মায়ের মুখ দেখেননি। তার স্বামী বর্তমানে ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মোহাম্মদির মুক্তির জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

নার্গিস মোহাম্মদির মতো একটি বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বকে আবারও গ্রেপ্তার করায় জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে তাঁর নির্বিচার আটক থেকে মুক্তি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলোও ইরানের এই পদক্ষেপকে “রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের অংশ” হিসেবে দেখছে।

নার্গিস মোহাম্মদির গ্রেপ্তার শুধু একজন মানবাধিকারকর্মীর আটক নয়; এটি ইরানে চলমান স্বাধীনতা–সংগ্রাম ও নারীর অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের আরেকটি প্রতীকী ঘটনা।
তার এই গ্রেপ্তার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে আবারও ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

কোন মন্তব্য নেই