বিডিআর হত্যাকাণ্ড: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা
কমিশন প্রধান ফজলুর রহমান জানান, ১৬ বছর আগের এই ঘটনার বহু আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তদন্ত ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবু সাক্ষ্য, নথি, পূর্ববর্তী তদন্ত প্রতিবেদন এবং অন্যান্য উপাদানের ভিত্তিতে ঘটনাটির সবদিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, কমিশন বলেছে—বিডিআর হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং ঘটনাটির সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে এসেছে, যা তদন্তে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার প্রতিবেদনে উত্থাপিত কিছু মূল পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ঘটনার প্রেক্ষাপট, কারণ, পরিকল্পনা, বাহিনীর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং ঘটনার সময় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভূমিকা—সবই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটির সময় সেনাবাহিনী তৎক্ষণাৎ অ্যাকশন না নেওয়ার বিষয়টিও তদন্তে বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের আচরণ, মিডিয়ার ভূমিকা এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কমিশন বলেছে—ঘটনার সময় যমুনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককারী বিডিআর সদস্যদের পরিচয় ও তথ্য সংরক্ষণে ঘাটতি ছিল। নিরাপত্তা, তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত বিভিন্ন ধাপেও দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বাহিনীগুলোর অভ্যন্তরীণ নীতিমালা সংস্কার, তথ্য সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নয়ন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয় জোরদার করা এবং সংকটমুহূর্তে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতি দীর্ঘদিন অন্ধকারে ছিল। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। এটি দেশের জন্য একটি মূল্যবান দস্তাবেজ হয়ে থাকবে।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের হামলায় পিলখানায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। ঘটনাটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত।
কমিশনের সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক (অব.), মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন। জমা দেওয়ার সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই